ইস্কন মন্দির ভ্রমণ (One Day Trip To ISKCON Mayapur From Kolkata) 2022

  


     হটাৎ ঠিক করলাম ঘুরতে যাবো তাও আবার এক দিনের জন্য, কোথায় যাবো ভাবতে ভাবতে ঠিক করলাম, ইস্কন মন্দির দর্শন করতে যাবো আমার পকেট প্রায় খালি বলতে পারো, তাই ঠিক করলাম নুন্নতম খরচা তে এই ভ্রমণ টি সম্পুর্ন্ন করবো |

        ১৯ শে ফেব্রুয়ারী ভোর ৪ টে তে উঠে ভ্রমণের জন্য তৈরী হয়ে নিলাম, তারপর বাড়িথেকে ভোর ৬ টা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম, তখন ও জানতাম না যে আমার সামনে একটা ঝামেলা দাঁড়িয়ে আছে, ৬:30 এর মধ্যে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে গেলাম, কিন্তু বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি শুধু রয়েছে হাওড়া যাওয়ার বাস, কিন্তু আমি যাবো শিয়ালদা, আর আমার হাতে রয়েছে শুধু ১ ঘন্টা ২৩ মিনিট, মানে শিয়ালদা থেকে ৭:৫৩ এর কৃষ্ণনগর যাওয়ার ট্রেন রয়েছে |

       যাই হোক বাস পেতে পেতে ৭ টা বেজে গিয়েছে, আর আমার ভাগ্য এতোই ভালো যে বাস ঠিক টাইম মতো আমায় শিয়ালদা তে ৭:৪০ এ পৌঁছে দিলো, তখন আমি জানতাম না যে ৭:৫৩ র লালগোলা লোকাল ট্রেন টা আমি ধরতে পারবো না, অবশেষে আমি টিকেট কাটার জন্য লাইনে দাঁড়ালাম টিকিটের মূল্য ২৫ টাকা, কিন্তু সমস্যা শুরু হলো এখন থেকে, ট্রেন এর টিকিট যখন হাতে পেলাম তখন ৭:৫৩ বাজে, আর ট্রেন টা সঠিক সময় সাইরেন বাজিয়ে চোখের সামনে দিয়েচলে গেল |

            মনের ব্যাথা চেপে রেখে পরের লোকাল ট্রেন সার্চ করলাম মোবাইলে (where is my train) পরের গ্যালোপিন লোকাল ট্রেন সকাল ৯:৩৫, তাঁর মানে আরো ১ ঘন্টা ৪২ মিনিটের অপেক্ষা, অবশেষে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট পার করার পর ৯:৩৫ এর ট্রেন টা শিয়ালদহ স্টেশন এ এল যথা রীতি আমি জানলার পশে একটা সিটে বসে পড়লাম|


        শিয়ালদহ থেকে কৃষ্ণনগর পৌঁছাতে সময় লাগলো ২ ঘন্টা ১৫ মিনিট, আর ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতটা ছিল সে এক আলাদা লেবেলের, সে নানা রকমের খাবার জিনিস পত্র একের পর এক আস্তে থাকছে ট্রেনের কামরার মধ্যে, আমি তো অনেক ভোরে বাড়ি থেকে বাড়িয়েছি তাই বেশ খিদেও পেয়েছে তাই আমি ট্রেনের কামরা থেকে এক পেকেট চিরে ভাজা কিনে তা দিয়ে আমার সকালের জলখাবার সেরে ফেললাম|

        অবশেষে ট্রেন থেকে নেমে কৃষ্ণনগর স্টেশনের গেটের বাইরে অনেক টোটো রিসক্সা দেখতে পেলাম, আমাদের স্বরূপগঞ্জ হুলোর ফেরি ঘাটে পৌঁছাতে হবে, কিন্তু ওই টোটো রিক্সা গুলো মাথাপিছু ৫০ টাকা চাইছে তাই আমি কিছুটা এগিয়ে গেলাম|

         সামনে অটো স্ট্যান্ড এক ড্রাইভার দাদাকে অটোর ভাড়া জানতে উনি বললেন মাথাপিছু ২৫ টাকা, এই শুনে আমি বিশাল খুশি হয়ে অটো তে চড়ে বসলাম ২০ মিনিটের মধ্যে আমায় স্বরূপগঞ্জ হুলোর ঘাটে পৌঁছে দিলেন| তারপর ২ মিনিট হেটে ফেরি ঘাটে পৌছালাম, সামনে দেখি জলঙ্গি নদী| আর এই নদী পেরিয়ে আমাদের ইস্কন মন্দির পৌঁছাতে হবে, নদী পারাপারের জন্য মাথাপিছু ৩ টাকা করে পারে করি দিয়ে আমি নদীর ওপারে যেতেই দেখি অনেক অটো লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, বলছে মাথা পিছু ১০ টাকা করে দিলে ইস্কন মন্দির পৌঁছে দেবে |

        আমি গুগল ম্যাপ (Google Map) এ চেক করে দেখি মাত্র ১.৫ কিমি সরূপগঞ্জ ফেরি ঘাট থেকে ইস্কন মন্দিরের দূরত্ব, তাই ঠিক করলাম পায়ে হেটে মন্দিরে পৌছাবো, ১০ টাকা বাঁচানোর জন্য প্রায় ২০ মিনিট হেটে মন্দিরে পৌছালাম|

         তখন বাজে প্রায় দুপুর ১ টা, ঠিক করলাম গদা ভবনে দুপুরের প্রসাদ খাবো কিন্তু টিকিট কাউন্টারে গিয়ে দেখি টোকেন দেওয়া শেষ হয়েগিয়েছে, তবে বলে রাখি গদা ভবনে প্রসাদের টোকেনের মূল্য ৮০ টাকা, আর গদা ভবনের মেনুতে ছিল ভাত, ডাল, ফ্রাইড রাইস, বেগুনি, মিক্স সবজি, পনির, রুটি, মিষ্টি/পায়েস |  

        পাশে তাকিয়ে দেখি গীতা ভবনের প্রসাদের টোকেন দিচ্ছে, টোকেনের মূল্য ৬০ টাকা, মেনুতে রয়েছে ভাত, ডাল, বেগুনি, মিক্স সবজি, পনির, রুটি, মিষ্টি/পায়েস, আর এই গীতা ভবনের প্রসাদ গ্রহণের সময় দুপুর ১২ টা থেকে ১:৩০ পর্যন্ত| আমি শেষ বেচে প্রসাদ গ্রহণের লাইন দাঁড়িয়ে বুজলাম যে প্রতিদিন কত ভক্ত আসে শুধু এই ইস্কন মন্দিরে |

          অবশেষ গীতা ভবনে পৌঁছে টোকেন দিয়ে প্রসাদ গ্রহণের জন্য আসনে বসে পড়লাম, একে একে থালা, গ্লাস, জল, নুন এক এক করে দিতে থাকলো, তারপর শুরু হলো সেই সুবর্ণ সময়, সে বিশাল ডেচকি করে আনা ভাত ,ডাল, বেগুনি,মিক্স সবজি, পনির, রুটি দিতে থাকলো, কিছুক্ষন পরে দেখি আবার ভাত ,ডাল,মিক্স সবজি, পনির, রুটি রিপিট করে গেল, কিছুক্ষন পর আবার রিপিট করলো, সর্বোপরি ৩ বার ডাল ভাত সবজি পনির নিয়ে আমার পেট তো জয়ঢাক হয়েগিয়েছিল, সব শেষে এক খানা মিষ্টি পেয়ে আমার সাতকলা পূর্ণ হলো| অবশেষে হাত মুখ ধুয়ে পেটে হাতবুলিয়ে বাইরে আসতেই দেখি এক বিশাল ফুলের বাগান এক দুটো ফটো তুলে ইস্কন মন্দিরের চারিপাশটা ভালোকরে ঘুরে নিলাম|

        মন্দিরের পুনর্নির্মাণের জন্য মন্দির বন্ধ রয়েছে, মন্দির সম্পূর্ণ হতে এখনো প্রায় ১ বছরের বেশি সময় লাগতে পারে অনুমান, আর এই মন্দিরটির আয়তন প্রায় ১ লক্ষ স্কোয়ারফীট, এশিয়ার মধ্যে যতগুলি ইস্কন মন্দির আছে তারমধ্যে এই মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরটি সবথেকে বৃহৎ মন্দির বলে মনে করা হয়| আর এই মন্দিরটা এতটাই বড়ো যে এখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষ একসাথেই ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে পারে|

        এবার আমার বাড়ি ফেরার পালা, তাই আমি একইভাবে প্রথমে হেটে তারপর নৌকো তারপর অটো করে কৃষ্ণনগর স্টেশনে পৌঁছে বিকাল ৪:২০ র গ্যালোপিন লোকাল ট্রেন ধরে ৬:৪০শে শিয়ালদহ পৌছালাম, তারপর বসে করে বাড়ি ফিরে এলাম|

সর্বোপরি একদিনে কলকাতা থেকে মায়াপুর ভ্রমণের অভিজ্ঞতটা এক কথায় অসাধারণ

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :-

১।  বাড়ি থেকে হেটে ফ্রীতে বাস স্ট্যান্ডে  পৌঁছলাম ।
২।  3A বাস স্ট্যান্ড থেকে বসে করে শিয়ালদাহ স্টেশন পৌছালাম, ভাড়া  ১৮ টাকা ।
৩। শিয়ালদাহ স্টেশন থেকে কৃষ্ণনগর লোকাল ট্রেনে করে পৌছালাম কৃষ্ণনগর 
      স্টেশন, ভাড়া ২৫ টাকা । 
৪। স্টেশন থেকে অটো ধরে পৌছালাম স্বরূপগঞ্জ হুলোড়ঘাট, ভাড়া ২৫ টাকা । 
৫। তারপর ফেরী ঘাট পাড়িয়ে পৌঁছেগেলাম মায়াপুর, নৌকের ভাড়া ৩ টাকা ।
৬। মায়াপুর অটো স্ট্যান্ড থেকে মন্দীরে পৌঁছাতে ভাড়া ১০ টাকা। 
৭। আর ইস্কন মন্দিরে প্রসাদের মূল্য বিভিন্ন ভবনে বিভিন্ন, যেমন গোড়া ভবনে
     ৮০ টাকা আবার  গীতা ভবনে ৬০ টাকা । 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ