টাকি অভিযান সইকেল নিয়ে (Visit Taki with my Cycle 14th October 2021)

প্রতি সপ্তাহে শনি রবি ছুটি পাই, আর তার মধ্যে একদিন সাইকেল নিয়ে ভর ভর ঘুরতে যাই, আর আমার একটা ইচ্ছা ছিল প্রতিদিন আমার সাইকেল চালানোর মাত্রাটা বাড়াবো, মনে আস্তে আস্তে বেশি বেশি কিলোমিটার চালাবো। আমি শেষ ১২০ কিমি চালিয়েছিলাম একদিনে গিয়েছিলাম ব্যারাকপুর। তারপর ইচ্ছা ছিল আরেকটু বেশি চলানোর ।
পরের বার কোথায় যাবো কোথায় যাবো ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো "টাকি" ভারত বাংলােশের বডারে, যেই ভাবা সেই কাজ। আমর এক দাদার বাড়ি টাকির পাশে, হাসনাবাদ এ,ওখানে নাকি দুগ্গা ঠাকুর বিসর্জন নাকি এক অভিনব কায়দায় হয়।দূর্গা প্রতিমাকে নৌকাকরে মাঝ গঙ্গা তে নিয়ে যায়, ওখানে ওপার বাংলা ও এপার বাংলার দুর্গা প্রতিমা মাজগঙ্গতে গিয়ে বিসর্জন হয়।

আমি ঠিক করলাম ভর ভর সাইকেল চালিয়ে টাকি যাবো, পরে শুনলাম বর্তমানে করোনা অতিমারী সমস্যার জন্য ওই মাঝ গঙ্গা তে আর বিসর্জন হয় না। আমার বাড়ি থেকে টাকি র দুরত্ব গুগল ম্যাপে দেকাছে ৮২ কিমি।

কিন্তু করোনা অতিমারী জন্য যে ওই বিসর্জন অনুষ্ঠান না হওয়ার আমার মন খারাপ হয়ে গেলো। যাই হোক ঠিক করলাম যাবো না, সারা পুজোটা বাড়িতে কাটালাম মা। অবশেষে সেই দিনটি এল দশমী ১৪ ই অক্টোবর ২০২১, আমি ভোর ৪টে নাগাদ সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, সাথে  নিয়েছি শুধু ৭৫০ মিলি লিটার জল।

তখন ও জানতাম না যে আমি আজ টাকি যাচ্ছি, প্রায় ২ কিলোিটার সাইকেল চালানোর পর একটা রাস্তার পাশে দাড়িয়ে ফটো তুলাম ,মাথার উপরে নীলাভ লাইট জ্বলছে, ফটো টা নিজে দেখার পর মনটা বেশ খুশিতে ভরে গেল। তখন বাজে ভর ৪:৩০ আমি ঠিক করলাম আজ দশমী আর আজ ই যাবো টাকি, সোটাং করে সাইকেলে বসে টাকির উদ্দশে রওনা দিলাম, একের পর এক রাজপথ, ওলি গলি পেরিয়ে চললাম ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে, শুধু মনে একটাই চিন্তা কখন পৌঁছাবো। ইতি মধ্যে মাকে ফোন করে বলে দিলাম আমার ফিরতে বেশ খানিক দেরি হবে তুমি চিন্তা করো না।
সে বিশাল পথ পার করে পৌছালাম টাকি ঘটে, তখন প্রায় বাজে সকাল ১১:৩০ নদীর পার বরাবর বেশ কিছুটা সাইকেল নিয়ে চক্কর কাটলাম, তারপর নদীর পারে কাঁটা তারের বেরার পাশে এক মাসিমার পাশে গাছের নিচে বসে পড়লাম, ওনার সাথে বেশ খানিক্ষন কথা ও হলো, তারপর এক এক করে দূর্গা প্রতিমা টাকি ঘটে আস্তে লাগলো বিসর্জনের জন্য।

আমি ওখানকার বিখ্যাত পূজা রাজবাড়ীর প্রতীমবিসর্জনের সামিল হলাম, এই ভাবে বেশ ঘণ্টা দুই কেটে গেলো, তখনও প্রায় খালি পেটে আছি, খালি পেটে আছি বলাটা ভুল হবে, কারণ আমি যাওয়া আসা মিলিয়ে প্রায় ৩ থেকে সরে তিন লিটার শুধু জল খেয়েছি।আর সত্যি বলতে তখন আমার মধ্যে যে উদ্দীপন চলছিল যে খাবার কথা মনেই ছিলনা।
আমি টাকি রাজবাড়ীর প্রতিমা বিসর্জন পুরো কর্মকাণ্ডের সাক্ষী রইলাম।
তারপর আমর মনে পড়লো যে আমি বাড়ি থেকে প্রায় ৮২ কিমি দূরে দাড়িয়ে আছি, আমায় তো আবার ওই ৮২ কিমি সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে, এই ভেবে আবার বাড়ির দিকে রওনা দিলাম, প্রায় ২০ কিমি পথ অতিক্রম করে একটা দোকান থেকে ৫ টাকা দামের ২ টি বিস্কুট কিনে আবার সাইকেল চালাতে থাকলাম , এদিকে সূর্যি মামা মাথার উপর  আর কোনো ভাবেই সাইকেল চালানো সম্ভব নয়,
তখন আমার চোখ শুধু রাস্তার দুই পাশে গুরছে, কোথায় একটা ছায়া তে একটু বিশ্রাম নিয়া যায়।
টাকি থেকে প্রায় ৪০ কিমি সাইকেল চালানোর পর একটা বন্ধ চা এর দোকানের বেঞ্চি তে বসে পকেটে থেকে বিস্কুট দুটো বারকরে খেতে শুরু করলাম, পাশে ই দেখি পানিও জলের কল, এত সোনায় সোহাগা বিস্কুট জল খেয়ে বেশ খানিক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিলাম, প্রায় ঘন্টা ২ এর মত, তখন বাজে বিকাল ৩:৩০ থেকে ৪ টে , সূর্যি বাবা মেঘের তলায় লুকিয়ে পড়েছে, সেই সুযোগে আমিও সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় ৭:৩০ বেজে গেলো।
সত্যি কথা বলতে কি আমার নিজের ই অবাক লাগছে যে আমার সেদিনে শুধু নাকি ১০ টাকা খরচা হয়েছে।
যাই হোক এই ছিল আমার বাড়ি থেকে টাকি সাইকেল নিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ