দিঘা.............
এই ভ্রমণটি আমার জীবনের দ্বিতীয় ভ্রমণ ,প্রথম আমি গিয়েছিলাম পুরি মায়ের সাথে বছর দুয়েক আগে | আমি আর আমার দুই বন্ধ দিঘা যাবো বলে বছর দুই তিনেক ধরে প্ল্যান করে যাচ্ছি, কোনোমতেই সেই প্ল্যান সম্পূর্ণ হচ্ছিলোনা |
অবশেষে ৩১ শে অগাস্ট ২০২১ সবাই মিলে ঠিক করলাম প্ল্যান আর করবোনা, আগামী শনিবার এ আমরা দিঘার উদ্দেশে রওনা দেব , যেই বলা সেই কাজ , আরও একটা বন্ধকে রাজি করিয়ে নিলাম , আর ঠিক করলাম আমরা দিঘা যাবো আমাদের বইকে চেপে | একে মাসের শেষ তার উপর আবার বইকে নিয়ে দিঘা সব দিক চিন্তা ভাবনা করে কিভাবে কম খরচে যাওয়ায় সেই ভাবতে রইলাম, অবশেষে আমরা ঠিক করলাম আমরা ৪ জন ১৫০০ টাকা করে দেব আর আমাদের মোট টাকা চাঁদা উঠেছিল ৬০০০ টাকা | আর অবশেষে আমাদের সেই দিঘার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী আমরা ভোর ৪টে তে ৪ বন্ধ মিলে নিউ আলিপুর ( কলকাতা ) থেকে রওনা দিলাম আর আমাদের বাহন হিসাবে ছিল ২ টি ১২৫ সিসির বাইক (Glamour 125 & SP 125)
সর্বপ্রথম সঠিক মাইলেজ পাওয়ার জন্য ট্রিপ মিটার টা শুন্য (Zero) করে দিলাম, এতভোরে আমরা সবাই খালিপেটে বাড়িয়ে পড়লাম ঠিকই , দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের বাহন গুলি চেচিয়ে বলে উঠলো " আমাদের খিদে পেয়েছে ", অগত্যা কিছু করার নেই চললাম দুর্গাপুর উড়ালপুল পেরিয়ে পেট্রল পাম্প আর সন্ধানে | আলিপুরের কাছে পৌঁছে একটা পেট্রল পাম্প থেকে ৫০০ টাকা করে ২ টো বাইকে পেট্রল নিয়ে নিলাম, আবার দিঘার পথে চলতে শুরুকরলাম একের পর এক উড়ালপুল পেরিয়ে, তারমধ্যে অন্যতম হলো " বিদ্যাসাগর সেতু ", আর আমরা এই বিদ্যাসাগর সেতু পেরিয়ে কলকাতা কে টাটা করে আন্দুল রোড ধরে চললাম NH-16 ছুতে |

কিছুক্ষনের মধ্যে আমরা হাইওয়ে তে পৌঁছেগেলাম তখন আমাদের অভিজ্ঞতা টা ছিল অন্য রকম যা বলে বোঝানোর নয় , সেতো বিশাল রাস্তা আবার একই পশে ৩ টে করে লাইন | প্রথম কিছুক্ষন তো থমকে দাড়িয়ে পড়লাম , আর বোঝার চেষ্টা করলাম যাবো কিভাবে ? আর প্রথম বুজলাম হাইওয়ে আর কলকাতার রাস্তার পার্থক্য , আর হাইওয়ের চারিপাশের যা দৃশ টা দেখে লোভে সামলাতে না পেরে সবাই মিলে হাইওয়ে কে পশে রেখে কিছু ফটো তুলে নিলাম |
আবার চললাম আমাদের গন্তব্যের দিকে , আমাদের এটা প্রথম বাইক নিয়ে ঘুরতে যাওয়া আর তার থেকেও বড়কথা অজানা রাস্তা , সব মিলিয়েমিশিয়ে একাকার , আর আমাদের এই অজানা পথকে চিনিয়ে দিতে সাহায্য করেছে "
Google Map " |অজানা রাস্তায় চলেছি ভুল হবে না তা আবার হয় নাকি ? আমাদের প্রথম রাস্তা বিভ্রাট হয়
কোলাঘাট মোর ,
তারপর আবার লোকাল পথচারী কে জিজ্ঞাসা করে রওনা দিলাম NH-16 ছেড়ে NH-116 এর দিকে ছুটে গেলাম , কিছুটা যাওয়ার পর আমাদের মনে হলো পেতে ছুঁচো ডন মারছে, কি খাওয়ায় কি খাওয়ায় ভাবতে ভাবতে এক বন্ধ বায়না জুড়ে দিলো " পেটাই পরোটা " খাবে, তখন সবার মন গিয়ে পড়লো দিঘা থেকে পরোটা খোঁজার দিকে |
বাইকের পিছনে যারা বসে ছিল তাদের উপর দায়িত্ব গিয়ে পড়লো পেটাই পরোটার দোকান খোঁজার দিকে , বেশ কিছুটা যাওয়ার পর দোকান খুঁজে না পেয়ে বাইক দাড়করিয়ে একটা বন্ধ তার ব্যাগ থেকে চাল ভাজা আর ছোলা ভাজা বের করলো , আমরা হাত মুখ ধুয়ে ওই চাল ছোলা ভাজা খেতে শুরু করলাম , আর ঠিক করলাম " নন্দকুমার " পৌঁছে আমরা পেটাই পরোটা খাবো , রীতিমতো আমরা নন্দকুমার আর দিকে রওনা দিলাম | কিছুটা যাওয়ার পর আমার চোখে পরলো পেটাই পরোটার দোকান , আমাদের বাইক গুলো দাড়করিয়ে ছুটলাম দোকানদারের দিকে , সবাই ১৫০ গ্রাম করে পরোটা খেলাম আর তারপর মনে হলো আমাদের পেটের ছুঁচো গুলো শান্ত হয়েছে |
তারপর আবার বাইক স্টার্ট দিয়ে নন্দকুমার পৌঁছে ডানদিকে চলেগেলাম এবার NH-116 কে বই বই বলে NH-116B কে স্বাগত জানিয়ে চললাম, তার পর কিছুটা যাওয়ার পর শুরু হলো দুর্বিসহ যাত্রা রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ স্টোনচিপ চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে , অনেক কষ্টে ওই ৭-৮ কিলোমিটার রাস্তা পারকরে চললাম, NH-116B ধরে যেতে যেতে আমরা পৌছালাম কাঁথি, সবাই একটু দাঁড়িয়ে বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিলাম যে আমরা দিঘার কাছে পৌঁছে গিয়েছি |

তখন ও প্রায় ৩৫ কিলোমিটার বাকি দিঘা পৌঁছাতে এর পর আমরা কাটা ১৮০ ডিগ্রি টার্ন নিয়ে দিঘা বাইপাস রোড উঠে পড়লাম , তারপর সেকি প্রাকৃতিক সুন্দরায়ণ, দুধারে সবুজ গাছ আর সবুজ গাছ , আর এই সবুজের বুক চিরে বয়ে চলেছে কুচ কুঁচে কালো রাস্তা শুধুতাই নয় দুপাড়ে ছোট ছোট পুকুর বা ভারী আর তার মধ্যে চাষ হচ্ছে চিংড়িমাছ সে আবার অভিনব কায়দায় না দেখলে বিশ্বাস করার জো নাই ওই পুকুরে আবার ফ্যান এর পাখার ব্লেডের এর মতো কি যেন গুরছে , আর তার সাথে সাথে পুকুরের জল গুলো ও এদিক থেকে ও দিকে করছে , মনে কৌতহল হলো ওমনি বাইক থামিয়া ওই পুকুরের পাশে দাড়িয়ে থাকা স্থানীয় মানুষ কে জিজ্ঞাসা করে ফেললাম " এটা কি হচ্ছে ? '' উনি বললেন চিংড়ি মাছ চাষ হচ্ছে আর এই পাখার ব্লাডে এর সাহায্যে চিংড়ি মাছ কে তারা করা বা দৌড় করানো হয় এর ফলস্বরূপ চিংড়ি মাছ গুলো তাড়াতাড়ি বরো হয়ে যায়, এর মনোরম দৃশ উপলব্ধি করতে করতে পৌঁছে গেলাম
রামনগর বাজার |
সে বিশাল ভিড় মনেহলো বেহালা বাজার চলে এসেছি, ( যারা কলকাতা তে থাকো তারা অবশ্যই বেহালার নাম শুনেছো )
যাই হোক সব বাধা বিপ্পতি পেরিয়ে অবশেষে পৌঁছে গোলাম
ওল্ড দিঘা তে (
Old Digha ), আমাদের বাইক গুলোকে সমুদ্র পারে নিয়েগিয়ে কিছু ফটো তুলে নিলাম নিজেদের, এর মধ্যে এক বন্ধ বার বার বলছে ফটো পরে তুলবি আগে চ থাকার ঘর খুঁজি | আমরা সবাই তার কথা মতো বাইক স্টার্ট দিয়ে চললাম হোটেল খুঁজতে , প্রথমে একটা হোটেলে গিয়া জিজ্ঞাসা করলাম ৪ জন থাকার ঘরের ভাড়া কত ? যাই হোক ঘর ও ঘরের ভাড়ায় মনের মতো হলো, কিন্তু আবার আবার একটা সমস্যায় পড়লাম , হোটেল এর কর্মী রা বলছেন হোটেল এ থাকতে হলে (
Covid Final Certificate ) করোনার ফাইনাল সার্টিফিকেট দেকতে হবে নয় তো (
RTPCR Negative Report ) আরটিপিসির নেগেটিভ রিপোর্ট দেখতে হবে, আমাদের তো মাথায় হাত কারণ একটা বন্ধুর শুধু ২টো ডোস সম্পুর্ন্ন হয়েছে এর বাকি আমাদের ৩ জন এর মাত্র ১ তা করে ডোস সম্পূর্ণ হয়েছে ,আমাদের মাথায় শুধু এটাই গুরছে যে ২০০ কিলোমিটার বাইক চালিয়ে আবার বাড়ি ফেরত যেতে না হয় ?
আমরা সৰাই হোটেল খুঁজতে থাকলাম , কিছুক্ষন পর সব হোটেল একই কথা বলছে দেখে আমরা রেগে হাল ছেড়ে দিলাম , কিন্তু ওই বন্ধ টা যে হোটেল খোঁজার কথা বলেছিলো , ও কিন্তু হাল ছাড়িনি , কারণ ও জানতো যে দিঘা তে সস্তা ও ভালো হোটেল আবার এই করোনার সিসার্টিফিকেটে সব মিলিয়ে ঘর পাওয়া টা চাপের, অবশেষে আমরা দিঘা রোড এর উপর একটা এসি ঘর এর হোটেল পেয়েগলাম, আমাদের থাকার চিন্তা দূর হলো |এবার পালা সমুদ্রে নেমে স্নান করা যেই বলা সেই কাজ, সবাই ছুতে গোলাম সমুদ্র তটে, ঘন্টা ২ এক স্নান করার পর ঘরে ফিরে আসে আবার ভালো করে স্নান করে দুপুরের খাবারের অর্ডার করে দিলাম,তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৪ তে বাজে তখন সেটা আর দুপুরের খাবার ছিল না ওটা বিকাল এর খাবার হয়ে গিয়েছিলো |
যাইহোক খাবারের মেনুতে ছিল সবজি ভাত এর কাতলা মাছের কালিয়া, ফ্রাইড রাইস, চিকেন আমাদের দুপুরে খাবার শেষ করে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিলাম, তারপর ঠিক ৬ টা নাগাদ বাইক নিয়ে বাড়িয়ে পড়লাম উদয়পুর সমুদ্র পারের দিকে সেখানে ঘন্টা ২ এক থাকার পর চলে এলাম দিঘা মার্কেট এ সেখানে একটি মাছের দোকানে দাঁড়িয়ে পড়লাম আর অর্ডার দিলাম ২ তো কাঁকড়া ভাজা , ৪ জন মিলে ওই কাঁকড়া খেয়েনিলাম তারপর আবার ঘরে চলে গেলাম | রীতি মতো রাতের খাবার অর্ডার দিলাম আর বসে থাকলাম কখন আসবে খাবার তার অপেক্ষা তে কিছুক্ষন পর ফোন করে জানালো রান্নার ঠাকুরের জ্বর হয়েছে , সুতরাং রাতের খাবার পাওয়া যাবে না আমরা তো প্রথমে ভয় পেয়ে গোলাম যে রান্নার ঠাকুরের করোনা হলোনা তো আবার ?
মনে বড়ো ভয় ভয় করছিলো, কিছু হবে নাতো ?
যাইহোক রাতের খাবারের জন্য তাড়াহুড়ো করে খাবারের দোকান খুজতে বাড়িয়ে পড়লাম , একটা খাবার দোকানে ঢুকে রুমালি রুটি,বাট্টার নান,চিকেন দোপিসা অর্ডার করে দিলাম , রাতের খারাব সম্পুর্ন্ন করে ফিরে চললাম আমাদের ঘরের দিকে, তারপর বিছানা করে পরের দিনে গুম থেকে ওঠার জন্য ভোর ৪ টের সময় মোবাইল এ অ্যালার্ম দিলাম, কারণ মোহনা তে যাবো , তারপর ঘুমিয়ে পড়লাম |

রীতিমতো ভোর ৪ টের অ্যালার্ম বাজলো সবাই গুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইক নিয়ে বাড়িয়ে পড়লাম মোহনার পথে মোহনা তে গিয়ে অনেক মজা করলাম অনেক ফটো তুললাম আমি তো রীতিমতো মোহনার শেষ মাথায় চলে গিয়েছিলাম যাইহোক ঘন্টা ২ এক থাকার পর আমরা আবার ঘরে ফিরে এলাম, কারন আমাদের নিজেদের ঘরে ফেরার পালা ১০:৩০ এ ঘর ছাড়ার কথা তার উপর পরের দিন সোমবার, সবার অফিস রয়েছে যাই হোক আমরা সকালের খাবার টা আমাদের ঘরে বসে সেরে নিলাম তারপর স্নান করে বাক্স পেটরা গুছিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম |
আর আমাদের দুপুরের খাবার টা কোলাঘাটে সেরে ফেললাম, তারপর ৬:৩০ এর মধ্যে বাড়ি পৌঁছে গেলাম |
0 মন্তব্যসমূহ